একুশখানা ২৪ শে ডিসেম্বরের তুলনায় এবারের ২৪ -এ হয়েছিল সেই সমস্ত মানুষগুলোর সুরক্ষায় প্রতিবাদ ।
তুমি নিশ্চয়ই জানো স্যান্টাক্লজ আমি কোন মানুষদের কথা বলছি !
প্রতিবছর এই দিনে তোমার চেনা আমার প্রিয় ব্যাগটা রাত জেগে বসে থাকা তুমি আসবে বলে
কিন্তু এবার ঘরে এসে বিছানার পাশে টেবিলটাতে দেখতে পাওনি সেই ব্যাগকে
তুমি কেবল একটা চিরকুট দেখতে পেলে স্যাণ্টা
আর পাশেই আমি ঘুমন্ত অবস্থায় ।
গভীর ঘুমের মধ্যেও আমি অনুভব করেছিলাম পরিচিত নরম বৃদ্ধ হাত
তবুও চোখ খুলিনি ,
আমি চেয়েছিলাম তুমি চিঠিটি পড়ো
এবছর একটা অন্যরকম উপহার চাই যে !
অন্ধকারে বোধ হয় খুঁজে পাচ্ছিলে না গোল কাঁচের চশমাখানা
তবুও তুমি ভ্রু কুঁচকে পড়তে শুরু করলে প্রতিটি অক্ষর , প্রতিটি লাইন ……
চশমা ছাড়া সেদিন তোমায় বেশ ভালোই লাগছিল বুড়ো স্যান্টা ।
চিঠির প্রতিটি বাক্য তোমায় সেদিন বিদ্ধ করছিল কিনা জানিনা
বারংবার ডান হাতটা ঘষছিলে বুকের বামপাশে
যেন দেশলাই কাঠি জ্বালানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা !
ছেঁড়া ছেঁড়া শব্দগুলো জানান দিচ্ছিল কেউ আসলে ভালো নেই
তুমি ঠিক-ই বুঝেছো স্যাণ্টা এখানে সেই সমস্ত মানুষরাই তোমার দিকে চেয়ে আছে যারা বিভিন্ন উপায়ে নিঃস্ব হয়েছে
দারিদ্র্যতাকে উস্কে দিয়েছে মহামারি ,
ওদের চোখে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে !
ফুটিফাটা বুকজুড়ে তবুও কেবল উৎসব আর কিছু মিছে সাহায্যের হাতের ফসিল
শিশুটির পেটে দু-চারদিন অন্ন পড়ে নি ,
মায়ের শুষ্ক স্তনের উপর মাথা রেখে ওর ক্লান্ত কানদুটো তখনো শুনেছে সেণ্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চের ঘণ্টাগুলোর ঢংঢং !
চাকরি খুঁইয়ে পি.এইচ.ডি করা মেয়ে বা ছেলেটা যখন আত্মহননের প্রস্তুতি নিচ্ছে ,
তখন তার চোখে জন্ম নিয়েছে গান্ধারীর চোখ
দেখতে পায় নি আনন্দের আলোকসজ্জা !
বড়দিনে মেয়েটা অনেক কিছু প্ল্যানিং করে রেখেছিল
সে জানতো না এইদিনে তাকে ধর্ষিত বা অ্যাসিড অ্যাটাক্ড হতে হবে !
যারা দিনের শেষে কাজ করে বাড়ি ফিরছে তাদের জিভ বলি দেয়নি রেস্তরাঁর লোভনীয় বাটারবার্গার , চিকেন স্যাণ্ডউইচ কিংবা কফিতে
বেলি ড্যান্স , ডিসকো পার্টিতে না গিয়ে কেউ হয়তো ছাদের পাঁচিলে ভর দিয়ে জনতার ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে ।
আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম অ্যালেন পার্কের পাশ দিয়ে ,
একজন মুখোশধারী ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম মুখোশ পরিধানের অর্থ ?
বলল ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলায় মুখোশ পড়ে ভিড়ের মাঝে খুঁজতে বেরিয়েছে ।
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চলে গেল …..
” Pehla nasha pehla khumar
Naya pyar hay , Naya intezaar ”
চারিদিকে চেয়ে দেখি সবাই মুখোশ পড়েই উৎসবে মেতেছে
পার্কস্ট্রিট সহ গোটা কলকাতা পড়ে নিয়েছে মুখোশ
ভিক্টোরিয়ার সাদা গম্বুজে মরচে পড়া ভালোবাসার লালচে বাদামি দাগ
আঁধার রাতে গড়ের মাঠ খুব মায়াবী ।
প্রতিটি সবুজ ঘাসের মুখোশে মৃত কুয়াশার আস্তরণ
পরের ভোরে নিজেদের আবিষ্কার করতে জাগিয়ে তুলবে নিজেদের !
বো-ব্যারাক , এলগিন রোড ছাড়িয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে আমার স্বপ্নেরা
হয়তো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে উল্লাসিত মানুষগুলোর মুখোশের ভিতর !
চিঠি পড়ে চলেছো তুমি …….
প্রতিটি শব্দ দেখাচ্ছে পৃথিবীর অভিনবত্ব !
ঘন ঘন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছিলে ,
স্যান্টা তুমি বুঝতে পেরেছো নিশ্চয়ই আমি এবার কি উপহার চেয়েছি ?
বুঝতে পেরেছো তো কেন এতদিনকার ব্যাগ আত্মগোপন করেছে ?
————-স্বয়ং ( অভীপ্সা মজুমদার ঘোষাল ) ❤️❤️🎄🎄