মাঘ মাসের প্রবল শৈত্য প্রবাহের পূর্বে কোনো এক পৌষের ধান পথে বসিয়া আপন মনে মিঠে রোদ্দুরে গা সেঁকছিল একটি কাক। অগভীর সরিষা ক্ষেতের অনুরূপ গোড়ালি-জলে টপাটপ গোটা পনেরো ডুব দিয়া চিংড়ি মাছ আপনাকে শামুকের খোলকের ন্যায় মুড়িয়া পদ্মানদীর তীরে উঠিয়া আসিতেছিল।
কাকস্নানে কোনো তৃপ্তি নাই বলিয়া মার্জার ঈষৎ অট্টহাসি হাসিল। তাহার স্মৃতিতে কোনো এক আদিম বিস্ময় অন্তর্দ্বন্দ্ব করিতে লাগিল। কাক বেসুরো কর্কশ কন্ঠে অট্টহাসির দর্প চূর্ণবিচূর্ণ করিয়া বৃহদাকার ডানা ঝাপটাইয়া উড়িয়া যাইল। সহসা চিংড়ি সময়ের প্রতিকূলে বসিয়া উন্মুক্ত পৃষ্ঠদেশের তৈলচিত্র অঙ্কনে ব্যস্ত। অপরদিকে যে মকরসংক্রান্তির পৌষ-পার্বণ মেলায় সুস্বাদু পিঠে-পায়েস ফুরাইয়া আসিতেছে, তাহার খেয়াল নাই।
অতীব পুরানো এক জোছনার ওষ্ঠ বেয়ে পড়িতেছে শীতল তাড়ির মাদকতা। আর বারান্দায় দাঁড়ানো তরুণীর দুই চক্ষুতে ঠিকরে পড়িতেছে চন্দ্রের শুভ্র দ্যুতি।
এই দৃশ্যের ভিতর আর কেহ নাই। কেবল তাহার চিন্তায় ঢলিয়া পড়িতেছে কাকস্নান-শামুক-চিংড়ি-মার্জার-পাকা ধান আরো কতক বিচিত্র চরিত্র। সে নিদ্রিত রজনীকে সই পাতাইয়া একাই বকবক করিতেছে। উঠোনের সম্মুখে তাহাদের খানিক দূরে রাখিয়া দেখিতেছি কয়েক হাত তফাতে দাঁড়ানো তালগাছটির ভিতর সময়ের গলা জড়ানো সর্পের ফোঁস ফোঁস।
তাহার শব্দ ছাপাইয়া তিনতলার ওই অস্পষ্ট বাঁশির সুর আজ আবার একবছর পর তাহার কর্ণে ভাসিয়া আসিতেছে…