সারাটা দিন আজকে অন্তরার বাড়িতেই কাটলো ওর। উফ্! সে কি হইচই । এতকিছুর মধ্যে যে বাড়িতে এই খবর টা জানানো হয়েই ওঠেনি সেই দিকে ওর লেশমাত্র হুশ নেই। বার্থ ডে কেক কাটিং থেকে শুরু করে ডান্স। নানান গেমস, নানান ইভেন্ট । উফ্ !এককথায় অসাধারণ। অনেক দিন পর একটু অন্যরকম পরিবেশে সময় কাটাতে পারলো প্রেরণা। দারুন ইঞ্জয় হলো অন্তরার বাড়িতে। ওই দিকে ঢং ঢং করে ঘড়িতে বারোটা বাজলো।
সেকি! এত রাত হলো এদিকে আমার কোনো হুশ নেইই সেই দিকে।
ও তাড়াতাড়ি অন্তরার কাছে যায়। তুই বাড়িতে জনিয়েছিস তো?
অন্তরা কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বলে so sorry রে ।আমার একদম মাথাতে ছিল না আমার অনেক বড় ভুল হলে গেছে রে।আমি একদম ভুলে গেছি রে।
কথা টা প্রেরণার কানে এসে তীরের মত বিথে যায়। কি করিস তুই অন্তরা? তুই জানিস আজকে বাড়িতে গেলে আমর জন্য কি ঝড় অপেক্ষা করছে।
উফ্! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছুটে বেরিয়ে যায় প্রেরণা।
কি যে বলবে বাবা।ভাবতে ভাবতে বাড়িতে আসে প্রেরণা।ভয় ওর হাত পা যেনো শীতেও দরদর করে ঘাম তে থাকে। যাই হোক বাড়িতে এসে সাহস করে একপ্রকার calling Bell টা বাজায় ও।
অনিমা ছুটে এসে দরজা খোলে।
অনিমা – কোথায় ছিলি তুই ? বল; তোর কি মাথা খারাপ হলে গিয়াছে ? সেই সারাদিন তোর কোনো খোঁজ নেইই; কিরে উত্তর দে –
প্রেরণা কোনো উত্তর দিতে পারে না মাথা নীচু করে দাড়িয়ে থাকে শুধু।
অনিমা বলে তোর বাবা পুলিশে খবর দিয়েছে তুই জানিস!
প্রেরণার বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ইতিমধ্যেই ওর সারা শরীর যেনো কাঁপতে শুরু করেছে।সে ভেবেছিল বাড়িতে ফিরে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, বাবা বেশ অনেক কথা ও শোনাবে।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবেই বাবা বললেন শুধু,কাজ টা তুমি ঠিক করো নি। এর খেসারত তোমাকে দিতেই হবে। এইটুকুই বলেই বাবা চলে গেলেন। বড়োই বিচিত্র।
বেশ কটা দিন এই ভাবেই কেটে যায়। খুব স্বাভাবিক ভাবে।
সেদিনের ব্যাপার টা সে প্রায় ভুলতে বসেছিল। কারণ কারোর ই খুব একটা হুদখেপ নেই সে-বিষয়ে। তাই সব মিলিয়ে খুব সাধারণ ভাবেই দিন কাটছিল প্রেরণার।
আজকে প্রায় একটা মাস কেটে গেছে। কলেজ এ যেতে হবে।assisment এর খুব চাপ।একদিকে প্রাকটিক্যাল এর জন্য রাতের পর রাত জেগে কাজ করছে ও। তারপর উফ্ আবার প্রজেক্ট সাবমিট এর তারিখ যেনো কানের সামনে ঘণ্টা বাজাচ্ছে।
সকালের খাওয়া র টা সেরে কলেজ এর জন্য তৈরি হচ্ছে ও। কিন্তু বেশ কয়েক টা অদ্ভুত ধরনের ঘটনা ঘটছে আজ কে। মা আজ সকালে নিজে এসেই ডাকাডাকি করছে ঘুম থেকে ওঠার জন্য। বাবা ও অফিস এ যায় নি। একান্ত অসুস্থ না থাকলে বাবা ছুটি করে না। কিন্তু বাবা ও বেশ স্বাভাবিক আজ কে।ওদের সুবিশাল বাড়িটাও যেনো আজকে হটাৎ করেই সেজে উঠেছে। কোনো কারণ বুঝতে পারছে না প্রেরণা। টিপটপ করে সোফা টেবিল গোছানো।
কলেজ এ যা চাপ এইসব এর কারণ টুকু জানার সময় নেই ওর । Assisment টা সাবমিট করতেই হবে আজ কে।তরিহরি করে বেরোবে বলে ঠিক করে প্রেরণা।
গেটের সামনে অনিমা দাড়িয়ে।
অনিমা- আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারবি ? খুব দরকার ।
প্রেরণা- কেনো?
কাজ আছে আজ কে অনেক। একটু তাড়াতাড়ি আসিস বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অনিমা।
কোনো কিছুর বোঝার সময় নেই হাতে। প্রেরণা বেড়িয়ে পরে কলেজ এর উদ্দেশ্যে।
কলেজ এ গিয়েও মানসিক শান্তি পায় না ও। কোনো এক অশনি সংকেতের আভাস যেনো ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
নিশা আর ও গিয়ে একসঙ্গে প্রজেক্ট টা সাবমিট করে এসে ক্লাস এ বসে।
কেউ আসলো না ক্লাস এ।এই ক্লাস টা গেপ গেলো । নিশা আর প্রেরণা লাইব্রেরি তে গিয়ে কটা বই নেয়।
নিশা- কিরে;কি হোয়েচে তোর বল তো? যখন থেকে এসেছিস মুখ টা যেনো কেমন বেজার করে রেখেছিস।
কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে পরে প্রেরণা কিন্তু যাওয়ার আগে নিশাকে বলে তুই আমকে নোটস গুলো দিশ ত। একটু তাড়া আছে আজকে।
বাড়িতে যাওয়ার পথেই পড়ে ওই কৃষ্ণচূড়া গাছ । ওর সর্বকালের বন্ধু। কেনো আজকে বার বার অশনি সংকেত এর আভাস পাচ্ছি? কোনো কিছু তেই শান্তি পাচ্ছি না! আমি কি একটু সাধারণ ভাবে থাকতে পারি না? কেনো সবসময় সবাই আমর স্বপ্ন গুলো দুমড়ে মুচড়ে একাকার করে দেয়? কবে খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়তে পারবো? দু চোখ মেলে দেখতে পারবো এই দুনিয়া কে? প্রশ্ন গুলো যে ও নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে বলতে থাকে ওই কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসে থাকা নীলকন্ঠ পাখি টাকে।