সবাই বলে ভালোবাসার শহর নাকি প্যারিস। আমি বলি কলকাতা কম কি যায় ? প্যারিস যদি ভালোবাসার শহর হয় আমার কলকাতা তবে আবেগের শহর। এই শহরের প্রতিটি কোনায় লেগে আছে আবেগ। ভালোবাসা- মন্দবাসার ভাঙা-গড়ার স্মৃতিতে জড়িয়ে আমার শহর কলকাতা । শহরের একদিকে নদীর পারের একাকীত্বের নিস্তব্ধতা আবার মাঝ নদীতে প্রেম ভাসিয়ে কাঁধে মাথা রাখার আব্দার। ফিরতি পথে আরেকটু সময় একসাথে কাটানোর অজুহাতে ট্রামের ব্যাক সিট খুঁজে কেউ আঙুলে আঙ্গুল রাখে, আবার কোনো একলা প্রেমিক জানালার শার্সি আকড়ে চোখের জলের মরচে ধরায়। সবটাই শহর দেখে প্রতিদিন। শহরে প্রতিদিন ,দিন শেষে রাত হলে কাছের মানুষের বুকে ভালোবাসা খোঁজে , কেউ আবার প্রেম হারিয়ে নিকোটিনে ঠোঁট পুড়িয়ে মিথ্যে অভিনয়ে সামিল হয়। তাই আমার আবেগের শহর কলকাতা।
এই শহরে বৃষ্টি যেন প্রেমের আলাদা সংঞ্জা লেখে।
– কথা ভিজিস না আর ! এবার ঠান্ডা লেগে যাবে।
– এই চুপ কর তো। কিচ্ছু হবে না।
– গা- জোয়ারি কথা বলিস না। আয় এদিকে।
– না তুই আয়।
– দেখ সামনে ফাইনাল ইয়ার। জ্বর এলে!
– আসুক। তুই আছিস তো।
– আমি কি ডাক্তার ?
– না , তবে জ্বর এলে তোর আদরে আমার জ্বর এমনিতেই চলে যাবে।
– বোকা বোকা কথা বলিস না।
– ধূর! ভিজতে দে আমায়।
– এই! আয় এদিকে। আয়!
( আহিরী-র কোনো কথাই শুনতে নারাজ আজ কথা। বৃষ্টি ভিজতে ব্যাপক ভালোবাসে সে। বৃষ্টির ধারা প্রবল হতেই আহিরীকেও জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় কথা। কথার ইচ্ছে র কাছে কোনো বাহানাই সফল হয়েনি আহেরীর। তাই আজও সে কথার ইচ্ছে রাখতে বৃষ্টি ভিজলো দুজনে । )
– কথা ! তুই কোনো কথাই আমার শুনিস না রে।
– শুনবো ও না।
– হ্যাঁ! জানি তো। আমি না তোর বেস্টফ্রেন্ড।
– আচ্ছা ? বেস্টফ্রেন্ড ! ঠিকাছে।
– না ! সেটা বলিনি ভালোও বাসি তো তোকে।
– হ্যাঁ! বেস্টফ্রেন্ড কে ভালোবাসবি না তা হয় !
– বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে না তোকে !
– জানি।
( আহেরীর ভিজে শার্টের কলার চেপে ধরে ঠোঁটে আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে জড়িয়ে ধড়লো কথা।)
– কি জানিস ?
– এই যে আমি তোকে আর তুই আমাকে
– কি ?
– ধূর লজ্জা করে না নাকি?
– বাবাহ ! আজ হটাৎ এতো প্রেম ?
– হুম। ইচ্ছে হলো।
– বললি না ?
– ভালোবাসি।
– আমিও।
( বৃষ্টির গতি আরো তীব্র হয়ে চলেছে ক্রমশ। আহেরীর হাতে হাত রেখে দুজনে হেটে চলেছে বৃষ্টি ভেজা রাজপথের উপর দিয়ে। মাঝে মাঝে ঝোড়ো হাওয়ায় ভিজে কুর্তিতে আর খোলা চুলে কথা।আজ আহেরীর দৃষ্টি থমকে কথার চোখে। )
– এবার ফেরা যাক ?
– আহেরী শোন ?
– বল !
– পারবি আমায় ছেড়ে থাকতে ?
( থমথমে হয়ে গেল আহেরির দৃষ্টি। সে ভুলেই গেছিলো আর কিছুদিন পর কথা চলে যাবে তোকে ছেড়ে।)
– জানি না।
– এই আহেরী !
– হুম !
– মন খারাপ করে দিলাম বল !
– আরে না রে । ছার এসব। আমি তোকে ভালোবাসতে পারিনি তাই হয়তো।
– না আহেরী!
– ছাড় না! চল। অনেক ভিজে গেছিস। ঠান্ডা লেগে যাবে।
– আহেরী !
– বল !
– তোকে সত্যিই ভালোবাসি আমি।
– হুম। চল।
( কলকাতা শহর যেমন একদিকে প্রেমের ঠিকানা খুজে দেয় আবার কিছু প্রেমের ঠিকানায় ইতি টেনে দেয়। )
( আহেরী, কথাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসে।)
(আহেরী আর কথার সম্পর্কটা প্রায় পাঁচ বছরের। ক্লাস 11 এর শেষে আলাপ হয় ওদের। সেই থেকে ওরা বেস্টফ্রেন্ড আর কবে যে ওদের সম্পর্কের গভীরতা ক্রমশ ভালোবাসায় গড়িয়েছে তা ওদের কাছে অজানা। ওদের মধ্যে ভালোবাসা র পাশাপাশি দুজনের দুজনের প্রতি বিশ্বাস, বোঝাপড়া বরাবরই বেশ মসৃণ। শেষ নিশ্বাস পর্যন্তই আহেরী কথাকে তার পাশে চায়। কিন্তু সমাজের দৃষ্টিতে নাকি তাদের সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যত নেই, সমাজের নীচ দৃষ্টির কারণে কথার পরিবার ও আহেরী কে মেনে নিতে নারাজ। কিন্তু ওদের ভালোবাসা কি তবে সত্যিই শেষ হয়ে যাবে এই কারণে যে তারা দুজনেই মেয়ে! ভালোবাসা তো আসলে আবেগ। তবে কি আবেগ কেবল বিপরীত লিঙ্গের ক্ষেত্রেই প্রকট হয় ? আরো অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে আজ ও আহেরী কেবল কথাকেই ভালোবাসে।কথা ও আহেরী কে। এটা জেনেও যে তারা দুজন-দুজনকে একদিন হারাবে। আর সেই দিন আসতে খুব বেশি বিলম্ব নেই। কথা কে হারানোর প্রহর গোনে প্রতি রাতে আহেরী। নিকোটিনে মন দিয়েছে বেশ কয়েক মাস।)
– হ্যালো আহেরী ! বাড়ি ফিরেছিস ?
– হ্যাঁ।
– বাড়ি ফিরে মেসেজ করলি নাতো!
– ফ্রেশ হচ্ছিলাম।
– ডিনার করেছিস ?
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা ।
– রাখছি ।
– কথা বলবি না ?
– রাত জাগার অভ্যাস টা যে এবার বদলাতে হবে,
না হলে প্রতি রাতে !
– এখনো অনেকটা সময় আছে আহেরী।
– সময় আর চারটে কি পাঁচটা মাস ।
– Sorry আহেরি!
– কেনো ?
– কিছু না।
– হুম। রাখছি।
( কথার কথা শেষ হতে না হতেই ফোন রেখে দেয় আহেরী। আহেরী বুঝেছিল সে মেয়ে বলে তার কথা কে ভালোবাসার অধিকার নেই। সমাজ সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যতো দিন গড়াতে থাকে ওদের দুজনের মধ্যে কথা বলা কমে আসে। কেমন যেন চুপ হয়ে যেতে থাকে আহেরী। আহেরীর পরিবর্তন কথা র চোখ এড়ায় নি।)
– কি রে ? কলেজে এলি না?
– না।
– কেনো ?
– ইচ্ছে করছিলো না।
– কি হয়েছে বলতো তোর ?
– কি হবে ?
– এড়িয়ে যাচ্ছিস কেনো আমায় ?
– শোন! আমার কথা বলার ইচ্ছে নেই। প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দে।
– না ! জানি আমি কেনো এরম করছিস তুই। কিন্তু বাস্তব টা বোঝ একটু।
– কিসের বাস্তব ? এটাই যে আমি মেয়ে বলে তোকে ভালোবাসার অধিকার নেই?
– আমি কখনো বলেছি সেই কথা?
– আমাকে সবার সামনে স্বীকার ও তো করিসনি কোনোদিন!
– সবাই কে জানানোর কি খুব প্রয়োজন! আমি লোক দেখানো প্রেম করিনা।
– আচ্ছা! কাকু-কাকিমা র সামনে আমার হাত ধরে বলতে পারবি তো যে তুই আমাকেই ভালোবাসিস ? আমার সাথে থাকতে চাস।
– আমি বললেও ওরা মানবে না।
– তাহলে তোর কি মনে হয় আমার মা-বাবা মেনে নেবে ?
– আমি কি করে বলবো !
– তুই যদি নিজেই না মেনে নিতে পারিস আমাকে তাহলে কি করে কাকু-কাকিমা মেনে নেবে ! আর সমাজ !
– আমি তোকে মেনে নিই নি ? তুই বলতে পারলি কথাটা?
– তাহলে কাকু-কাকিমা কে কেনো বলতে পারছিস না ?
– ওরা মেনে নেবে না। আর আমি ওদের অমতে যেতে পারবো না।
– তোর বলার পর যদি কাকু-কাকিমা বুঝতে পারে যে তুই আমার সাথে থাকতে চাস, আমার সাথে ভালো থাকবি ! এর পরেও কি ওরা সমাজে কে কি বলবে সেই নিয়ে ভাববে ?
– মা জানে। তোর কাছে বলাটা যতোটা সোজা ! ততটা সহজ নয়। কেউই মেনে নেবে না আমাদের সম্পর্কটা।
– তোর ভালো থাকার চেয়ে কি ওদের কাছে সন্মানটাই আগে?
– আমি আসছি।
– এড়িয়ে যাচ্ছিস তো ?
– তোর সাথে আমার আজ দেখা করাটাই ভুল হয়েছে।
– কথা ! ঠিকই বলেছিস।
– আসছি।
( এর আগেও ওদের মধ্যে কথাকাটাকাটি বেশ অনেকবারই হয়েছে। তবে বিচ্ছেদ কোনোদিন ও না। বোঝাপড়ার একটা শক্ত শিকড় ওদের সম্পর্ক টাকে আকড়ে রেখেছিল এতদিন। কিন্তু কিভাবে যেন আজ আলগা হয়ে গেল। আহেরী ও ভেবে নিয়েছে দুরে সরে যাবে কথার জীবন থেকে।)
( সেদিন বাড়ি ফিরে ডায়রি লিখতে বসে আহেরী। বরাবরই মনের না বলা কথা গুলো তার ডায়েরিতে প্রতিরাতে ফুটে ওঠে আবার ডায়েরির পাতা বন্ধ হতেই নিভে যায়। )
” ভেবেছিলাম তুই আমাকে বুঝবি কথা। তুই থাকতে চাস আমার সাথেই। হয়ত আমিই ভুল ছিলাম। জানিনা সত্যিই হয়ত তুই ও চাস আমাকেই। সত্যিই কি তাই? আর কেনোই বা মেনে নেবে আমাকে ! তুই ভালো থাকবি না আমার সাথে কোনোদিনও। তোকে ভালো রাখতে আমি পারবো না, কারন আমিও তো মেয়ে। একটা ছেলেই তোকে ভালো রাখতে পারবে। এবার আমাদের দুরত্বই ঠিক হবে। তোকে অন্য কারোর সাথে মেনে নিতে আমি পারবো না। তুই ও ভুলে যা আমায়। নতুন করে শুরু করিস সব কিছু।”
( আর কিছু লিখতে পারলো না আহেরী। বাইরের বৃষ্টি যেন তার মনের গভীরেও ভিজিয়ে দিল , চোখের কোনে নোনতা জলের অস্তিত্ব। সিগারেট বের করে টান দিতেই কথার ফোন । এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারলো না। বার পাঁচেক ফোনটা কেটে যাওয়ার পরে সিগারেটটা ফেলে ফোন রিসিভ করে আহেরী।)
– বল?
– রাগ করেছিস আহেরী ?
– না।
– আমি তখন তোকে ওই ভাবে কিছু বলতে চাইনি বিশ্বাস কর।
– জানি।
– রাগ করিসনা । আর কটা দিনই তো! তারপরে তো !
– সব শেষ তাই তো ?
– আমরা তো কথা বলবো।
– হুম ! বলতেই হবে ! আমরা তো বেস্টফ্রেন্ড।
– না। তুই আবার ভুল বুঝছিস আমায়।
– আমি বুঝবো কি করে তোকে ? আমি তো ভালোবাসতেও পারিনি তোকে।
– আহেরী প্লিজ!
– তুই ভুলে যা আমায়। ভালো থাকবি তুই।
– কেনো এরম বলছিস। একটু বোঝ আমাকে।
– ব্লক করে দে।
– কি?
– নতুন করে শুরু করিস। যদিও এখন দেরী। তাও ভুলতে তো সময় লাগবে।
– আহেরী ? আমি তোকে ভুলতে চাই না।
– আমাকে ছেড়ে থাকতে চাস !
– না চাই না। কিন্তু!
– কিন্তু তেই আটকে ?
– আহেরী ?
– আমি রাগ করিনি কথা তোর উপর। কিন্তু আমার ও মনে হয় তুই ভালো থাকবি না আমার সাথে। একটা ছেলে তোকে যেটা দিতে পারবে আমি কোনোদিনই পারবো না।
– তোকে ভালোবাসি আমি। কিচ্ছু চাইনা আমি।
– আবেগে বলছিস তুই।
– না।
– আমি তোর জীবনে না থাকলেই তুই ভালো থাকবি কথা।
– তোকে ছেড়ে আমি ভালো থাকতে পারবো না আহেরী।
– আমি তো থাকবো বেস্টফ্রেন্ড হয়ে।
– আহেরী!
– রাখছি। তিনটে বাজে খুব ঘুম পেয়েছে।
– হুম। কাল একবার দেখা করবি ?
– বল কোথায়?
– বাড়িতে ?
– মানে ?
– হ্যাঁ ! একবার আয়।
– কেনো?
– কাল দীপ আসবে। মা-বাবা চাইছে ফাইনালটা কম্পলীট হলেই বিয়ের ব্যাবস্থা করবে।
– কি ?
– হ্যাঁ! কাল যদি বলতে না পারি । আর কোনোদিনই বলা হবে না।
– ঠিকাছে। কখন আসবো?
– এগারোটার দিকে আয়।
– ঠিকাছে।
শোন না
– বল!
– Sorry কথা! আমি এই ভাবে কথা বলতে চাইনি রে। বিকেলও তোর সাথে এই ভাবে কথা বললাম।
– আরে ধূর ! তোকে বুঝি আমি। জানি তুই কষ্ট পেয়েছিস।
– Love you কথা। সম্পর্কটা না থাকলেও আমি থাকবো তোর জন্য।
– Love you আহিরি।
( ডায়েরিতে লেখা পাতাটা ছিড়ে ফেলল আহেরী। আহিরি বুঝতে পেরেছে ,সে সত্যিই ভুল বুঝেছিল কথা কে। কথা চাইলেও সমাজের নীচ দৃষ্টির গন্ডি এড়িয়ে ভালোবাসা কে আকড়ে ধরতে পারবে না। কিন্তু তবুও মনে একটা খারাপ লাগা থেকেই গেল আহেরীর, কথা ওদের ভালোবাসা কে সবার সামনে স্বীকার করতে পারবে না কেনো ! )
( ঘড়ির র কাটা এগারোটা ছুঁতে এখন মিনিট পনেরো বাকি। কথার বাড়ির নিচে দাড়িয়ে আহেরী।)
– আয়!
– হুম।
– কি হয়েছে ?
– জানি না আর হয়তো তোর বাড়ি কোনোদিন আসতে পারবো না।
– এরম বলিস না আহেরী । চল উপরে।
– হুম।
( আজই হয়তো ওদের দুজনের শেষ দেখা হবে। এই ভাবনায় মন খারাপ হয়ে যায় দুজনের।)
– কাকিমা! আসবো?
– হ্যাঁ ! আয়!
– ভালো আছো ?
– হ্যাঁ ! রে তুই কেমন আছিস ? অনেক দিন তো আসিস ও না।
– হ্যাঁ ! ভালো আছি।
– কি রে তুই এতো চুপচাপ কেনো ?
– কাকিমা ! একটা কথা বলবো ?
– জানি তুই কি বলবি।
কথা তুই একটু বাইরে যা।
– কেনো? ( কথা)
– আহেরী র সাথে কথা আছে। একটু যা ।
– হুম ( কথা)
– বল ?
– কাকিমা ! আমি কথা কে ভালোবাসি।
– জানি।
– আমরা একসাথে থাকতে পারি না ?
– সেটা হয় না।
– কেনো ?
– সমাজ মেনে নেবে না। আর এটা হয় না ! তুই ও একটা মেয়ে আহেরী। বোঝ একটু।
– না! কাকিমা। আমি ওকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।
– তুই যেটা চাইছিস সেটা কখনোই সম্ভব নয়। আমিও মেনে নেবো না।
– কাকিমা ও কি ভালো থাকতে পারবে আমায় ছেড়ে?
– হ্যাঁ ! প্রথমে অসুবিধে হলেও পরে ওকে অ্যাডজাস্ট করতে হবে।
– কাকিমা ও যদি জোর করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে , শেষে যদি ও একা কষ্ট পায়। তোমাদের ভালো লাগবে তো ?
– সেরম কিছু হয় না।
– আমাকে মেনে নেওয়া যায় না ?
– না। সমাজ ও মানবে না।
– কেনো ? আমি মেয়ে বলে ?
– হ্যাঁ !
– সমাজের জন্য ওর ভালো থাকা কে তোমরা এই ভাবে !
– আহেরী। তুই ওর বেস্টফ্রেন্ড। শুধু সেটাই থাক।
– ওর ভালো থাকার থেকেও তোমাদের কাছে সমাজই আগে হলো?
– একটা মেয়ের সাথে ও কি করে ভালো থাকবে ?
– ও আমাকে ভালোবাসে তাই।
– সমাজ, আত্বিয় সবার সামনে ওকে আর আমাদের ও নিচু হতে হবে।
– কাকিমা! ওর যতোই ভালো হাসব্যেন্ড হোক না কেনো সমাজের দৃষ্টি সেই নীচ ই থাকবে। আচ্ছা একটা মেয়ে আর ছেলের বিয়ে হলেও সমাজে সেই নিয়েও সমালোচনা চলে।
যদি একটা ছেলেই একটা মেয়েকে ভালো রাখতে পারে তাহলে দিনের পর দিন কোর্টে ডিভোর্স ফাইলে টেবিল ভরতো না। যদি একটা ছেলেই পারে একটা মেয়েকে বিয়ে করতে ! তাহলে ইন্ডিয়ায় সেকশন 377 আইন পাস হতো না। সমাজ অনেক কিছুই বলে ।একটা ছেলে একটা মেয়েকে যদি বিয়ে করে তারপরও যদি মেয়েটার কোন দোষ না থাকে বিয়েটা যদি ভেঙে যায় সমাজ কিন্তু মেয়েটা কে দায়ী করে। যে সমাজ কোনদিনও কোন সময়ে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকে না। সেই সমাজই সুযোগ নিয়ে সমালোচনা করার সময় সব সময় এক পা বাড়িয়ে। নিজেদের ঘর না সামলে পাশের ঘরে উঁকি দেয় আর নিজের ঘর ভাঙলে পাশের বাড়ির সিমপ্যথি আদায় করে। সমাজ কোনো দিন ও চায় না নিজের ছাড়া অন্য কেউ ভালো থাকুক। নিজের ভালো টা তাই নিজেকেই বুঝতে হয়। আর কাকিমা তুমি আমার মায়ের মত তাই তোমাকে বলছি কাকিমা। আমি ওকে ভালোবাসি। শুধু মেয়ে বলে কি আমাদের সম্পর্কটা ভেঙে যাবে ? আর যদি ফিজিক্যাল রিলেশনের কথা বলো! না মানে তোমাকে এসব বলছি কারন সব দিক থেকেই বোঝাতে চাই। স্যাটিসফ্যাক্সন টা আবেগে আসে শরীরে নয়।
( আহেরীর কথা শেষ না হতেই কথার বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে। দীপ এসেছে। কাকিমা র সাথে আর কথা বলার সুযোগ হলো না। কাকিমার উত্তর টাও অজানা হয়েই থেকে গেল।)
( দীপের বাবা-মা ও সাথে এসেছে। বিয়ের কথা প্রায়ই শেষের দিকে। এই মুহুর্তে আর কিছুই করার নেই। চেষ্টা করেও হেরে গেল আহেরী সেদিন। ভেঙে গেল ওদের সম্পর্ক। শুধু বাড়ি ফেরার আগে কথা আহেরীকে ছাদে নিয়ে আসে।)
– আহেরী?
– বল !
– একটা কথা রাখবি ?
– বল !
– যোগাযোগ টা রাখিস।
– হুম। রাখবো।
ভালো থাকিস কথা।
– আর তুই !
– আজ থেকে আর আমার কথা ভাবিস না।
( আহেরীকে জড়িয়ে ধরে কথা। শেষ বারের জন্য সেদিন কথা আহেরীর হৃদস্পন্দন শুনেছিল। আহেরীও কথার কপালে ঠোঁট ছুইঁয়ে বাড়ি ফেরে।)
চার-মাস পর
– হ্যালো !
– বল ! কাল তোর বিয়ে !
– প্লিজ !
– কেনো ? জানতে ইচ্ছে করছে না দীপ এখন কি করছে ?
– আহেরী ?
– দীপ কে ফোন কর না ?
– তুই চুপ করবি !
– আজকের পর তো চুপ করেই থাকতে হবে।
– আমাকে ফোন করবি না ?
– করবো ! সময় হবে তোর ?
– তোর ফোনের অপেক্ষা করবো।
– আর তুই ?
– আমি কোনদিন নিজে ফোন করেছি তোকে ?
– এবার না হয় করিস।
– হুম।
– কথা ! আমাদের এর পরে আর কোনোদিন রাতে কথা বলা হবে না বল! আর একসাথে ফোনের এপারে আর ওপারে তুই আমি ভোরের সূর্য দেখব না। ফোনে আর আলর্ম বাজলে তুই হেসে ফেলবি না। আমাদের আর ওয়াটস্যাপে মিনিটে মিনিটে কথা হবে না বল!
– আহেরী ! প্লিজ চুপ কর।
– হুম !
শোন!
– বল !
– যদি দেখা হয় ! কথা বলবি ?
– হ্যাঁ রে।
– আর যদি জড়িয়ে ধরতে চাই?
– হুম, জড়িয়ে ধরিস।
– তুই তো তখন দীপের হয়ে যাবি বল ! মন খারাপ হলে আমাকে আর বলবি না ! রাগ হলে আমাকে বকবি না! ওর বুকেই মাথা রেখেই তোর রাতে ঘুম আসবে।
– আর তুই ?
– আমি একাই থাকবো। তোর ছবি আগলে, তোর আমার কল রেকর্ডিং শুনে, তোর দেওয়া ওই গিফ্ট বাক্স বার বার দেখে, মেসেজ আকড়ে। আমি একাই থেকে যাবো তোর অপেক্ষায়।
– একা থাকতে পারবি না তুই আহেরী।
– একা কোথায় ? তুই থাকবি তো।
– হুম ! তুই আমার থেকে বেটার ডিজার্ভ করিস আহেরী।
– বেস্ট কেই হারিয়ে ফেললাম। বেটার এর আর প্রয়োজন নেই।
– তুই থাকবি তো আহেরী?
– হ্যাঁ রে। আজ ঘুমা কাল তোর বিশেষ দিন।
– না ! আজ রাত টা অন্তত তোর সাথে থাকতে চাই আহেরী।
– হুম।
– ভালোবাসি আহেরী।
– আমিও। love you কথা।
– কাল আসবি তো আহেরী?
– হ্যাঁ !
-একটু তাড়াতাড়ি আসিস।
– কেনো?
– তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
– হুম। কাল জড়িয়ে ধরিস আমায়। আমি আছি তো।
সারাটা রাত কেটে যায় ফোনে । এর পরে আর কোনোদিন ওদের রাত জেগে ফোনে কথা বলা হবে না। পরের দিন সকালে শুরু হয়ে যায় কথার বিয়ের তোরজোড়। বাড়ির সবাই খুশির আমেজে। রবিন বাবুর একমাত্র মেয়ে। অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যস্ত সবাই। কথার গায়ে হলুদের পর্ব শেষে ঘরে। মন খারাপ। কিন্তু বিয়ে বাড়ি, সবার মনে আনন্দ, তাই ঠোঁটে মিথ্যে হাসি রাখতেই হচ্ছে। মাঝে মাঝে বারান্দায় গিয়ে সবার আড়ালে চোখের জল সামলে নিচ্ছে। দরজায় ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজে ঘরে ঢুকে দরজা খোলে কথা। দরজার ওপারে আহেরী দাড়িয়ে বিষণ্ণ মুখে।
– আসবো?
– আয়!
– সুন্দর লাগছে তোকে।
– তোর মুখ চোখ এরকম লাগছে কেনো?
– কেনো ? কিরম লাগছে?
– আমি তো থাকবো আহেরী।
– আরে কিছু না। এমনি।
– আমার চোখ এড়িয়ে যাবি ভাবছিস? পারবি না।
– তোকে এই সাজে দেখতে চেয়েছিলাম জানিস !
– হ্যাঁ ! আমিও তো তোকেই পাশে চেয়েছিলাম।
( কথা কে জড়িয়ে ধরলো আহেরী। আহেরী র বুকে মাথা গুঁজে আবেগে কথার চোখ ভিজে এলো।)
– কথা ! আমি যাব না তোকে ছেড়ে। তোর ই থাকবো।
– কিন্তু আমাকে যে! আমি তোর থাকলেও আমকে তো দীপ কে !
– জানি ! বুঝেছি কথা। কিন্তু আমাকে ভুলে যাবি না তো কথা ?
– কোনোদিন ও না রে ।
– তাহলেই হবে। তোর মনেই আমি বেঁচে থাকবো। আমাদের সম্পর্কটা সমাজে না বাঁচুক আমাদের মনে বেঁচে থাকবে।
– আমি যদি কোনো দিন তোকে জড়িয়ে ধরতে চাই ?
– জড়িয়ে ধরবি । আমিও তোর কপালে ঠোঁট ছুইঁয়ে না হয় আবার আমাদের সম্পর্কে ফিরে যাব। কি! দিবি তো তোকে ছুঁতে ?
– হ্যাঁ আহেরী।
– আর কাঁদিস না। মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে।
– তোর বুকে কবে আবার কাঁদতে পারবো জানি না রে। তাই আজ আমায় কাঁদ তে দে।
( হটাৎ করে দরজার বাইরে কথা কে ডাকার আওয়াজ শুনতে পেলো ওরা। কথার কপালে ঠোঁট ছুইঁয়ে আহেরী বেড়িয়ে এলো ঘর থেকে। সন্ধ্যের লগ্নে কথার বিয়ে হয়ে যায়। অগ্নিসাক্ষীতে কথা কে অন্য কারোর হতে দেখল আহেরী। বিয়ে শেষ হতেই আহেরী বেড়িয়ে যায় কথার বাড়ি থেকে। )
ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। ভালোবাসা বেঁচে থাকে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। কিছু প্রেম দুরে থেকেও কাছে থাকে। প্রেমের মিলন হবেই যদি সেই প্রেমে দুজনেরই দুজনের উপর বিশ্বাস, প্রেম আর ভরসা থাকে। হয়তো তাইই আহেরী আর কথার সম্পর্কে অন্ধকারের কালো মেঘ ঘনিয়ে এলেও অন্ধ্কারই যে আলোর পথ দেখায়। কথা র বৌভাতের রাতে ওদের সম্পর্ক নতুন মোড় নেয় ।
বৌভাতের রাতে
( ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় দীপ। কিছু একটা বলতে চায় সে কথা কে।)
– কথা !
– বলো!
– একটা কথা আছে তোমাকে বলার।
– বলো!
– হয়তো বলার পর তুমি আমায় ভুল বুঝবে।
– বললে বলো আমার ভালোলাগছে না।
– কথা! আমি একজন কে ভালোবাসি।
– কি ?
– হ্যাঁ ! মানে আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না। আমি তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। বিশ্বাস করো।
– তাহলে বিয়ে কেনো করলে ?
– বাড়িতে বাবার কথায়।
– হুম ! তাহলে ? সে কষ্ট পাচ্ছে না ?
– হ্যাঁ ! ও মেনে নিতে পারেনি।
– ফিরে যাবে ওর কাছে ?
– আর সম্ভব না।
– কেনো ? তুমি চাইলে আমাকে ডিভোর্স দিতে পারো।
– তোমাকে ঠকিয়েছি আমি।
– তাহলে তো বলতে গেলে আমিও।
– মানে?
– আমিও বাড়ির চাপে তোমাকে বিয়ে করেছি।
– ভালোবাসো কাউকে?
– হ্যাঁ !
– বাড়িতে বলেছিলে ?
– হ্যাঁ !
– তাহলে ? মেনে নিল না ?
– কারন ও মেয়ে।
– হুম। এটাই আমাদের সমাজ কথা। ভালোবাসা বোঝে না। আমিও যাকে ভালোবাসি মানে পৃথা, ওর ফিনান্সিয়াল কন্ডিশন খুব একটা ভালো না, তাই।
– হুম।
– কথা! মন খারাপ করো না। তুমি ওকে ফিরে পাবে। আর আমিও।
– হুম।
– আমরা বন্ধু হতে পারি ?
– হ্যাঁ ! দীপ!
– বলো!
– তুমি পারবে আমাকে আর আহেরী আবার এক করে দিতে।
– হ্যাঁ ! পারবো। দেখো যতো দিন না আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে তুমি যখন চাও ওর সাথে দেখা করো, কথা বলো।
– Thank you
– কেন?
– তুমি আমার আর আহেরীর সম্পর্ক জেনেও ভুল বোঝোনি।
– তুমিও তো আমাকে ভুল বোঝোনি।
– হুম।
– ঘুমিয়ে পড়ো তাহলে আমি সোফাতে যাচ্ছি।
– না না! তোমার বাড়ি। খাটেই থাকো। শুধু।
– হ্যাঁ! হ্যাঁ ! ভয় পেও না তুমি।
– হুম। আমি এখন ফোন করলে তোমার অসুবিধে হবে?
– না না।
– আচ্ছা।
( রাতের কথা গুলো র পর কথা একটু স্বস্তি পেলো কিন্তু ফোনে পেলো না আহেরী কে। মন টা আবার ভারি হয়ে গেল কথার। )
পরের দিন সকালে
– কথা ! ব্যস্ত ?
– না । বলো!
– কি ভাবছো?
– কিছু না । কাল ফোন ধরল না ও।
– বুঝেছি। তাই মন খারাপ ?
– হ্যাঁ।
– ও তো আঘাত পেয়েছে খুব। তাই হয়তো।
– হুম। তুমি কি বলছিলে বলো?
– আজ lawyer এর কাছে যাব। তুমি যাবে তো ?
– হ্যাঁ! আচ্ছা তোমার বাবা – মা ?
– দেখো এতো দিন আমি ওদের কথাই শুনেছি। এবার না হয় আমার ইচ্চেটাও আমি একটু দেখি।
– আবার ও thank you তোমাকে দীপ।
– ধূর। আমিও তো আমার ভালোবাসা ফিরে পাবো। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমাকে বুঝতে পারতো না। তুমি বুঝেছ।
– হুম। কখন যাবে বলো?
– বিকেলের দিকে। অফিস থেকে ফিরে তোমাকে নিয়ে যাব।
– আচ্ছা ।
– এই কথা!
– হ্যাঁ !
– আমরা বন্ধু হতে পারি তো ?
– হ্যাঁ ! অবশ্যই। পৃথার সাথে দেখা করাবে না ?
– তুমি চাইলে আজ ই ওকে ডেকে নেব। তুমিও আহেরী কে ডেকে নাও।
– দেখি ওকে ফোনে পাই কিনা।
– ঠিকাছে যদি না পাও তাহলে আমার গাড়ি টা পাঠিয়ে দেবো। তুমি চলে যেও রাতে আজ ওর বাড়ি। যদি তুমি চাও।
– না থাক। আগে ডিভর্স ফাইল টা রেডি হোক।
– কিন্তু ও যদি!
– না দীপ। ও আজও ভালোবাসে আর পরেও ভালোবাসবে।
– না না সেটা বলছি না। বলছি যে ও তো সত্যি টা না জেনে রোজ কষ্ট পাবে।
– হুম! ঠিক কিন্তু।
– না কোনো কিন্তু না। ওকে আজ বলে আসো। আর চাইলে আজ ওখানেই থাকো আমি বাড়িতে ম্যানেজ করে নেবো।
( বিকেলে দীপের সাথে lawyer এর কাছে যায় ওরা দুজনে। lawer প্রথমে অবাক হলেও যে বিয়ের পরের দিন ই ডিভোর্স ফাইলের জন্য আসার কারণে। কিন্তু কেস হিস্ট্রি জানার পর ওদের ডিভোর্স এর ব্যাবস্থা হয়ে যায়। তবে ওদের ছ-মাস সময় দেয়। ততদিন ওরা যাতে সেপারেশনে থাকতে পারে সেই ব্যাবস্থা ও সেড়ে নেয়। দুজনে।)
– কি? আহেরীর ফ্ল্যাটে যাবে তো ?
– না । ভাবছি একেবারে সেপারেশন লেটার নিয়েই যাব।
– ঠিকাছে তোমার ইচ্ছে। কিন্তু ওকে জানিয়ে দিও।
– হুম।
– তুমি আর আহেরী তো এই সেপারেশনের মাস কয়েকটা ওর সাথেই লিভইন করতে পারো!
– কাকু- কাকিমা কে কি বলবো ?
– মা বাবা কে আমি ম্যানেজ করে নেবো।
– আর তুমি ?
– আমিও ভাবছি পৃথা কে নিয়ে ফ্ল্যাট এ শিফট হয়ে যাব।
– আর তোমার বাবা-মা?
– এতো বাবা-মা কেনো করো? আমার কথা ভেবেছে ওরা একবার ও ?
– আচ্ছা রেগে যেও না।
– না । Sorry ।
– Its ok।
( পাঁচ দিন পরে সেপারেশন নোটিস আসে। দীপ আর কথা ঠিক করে নেয় ওরা সেপারেশন এ থাকবে আর ছয় মাস পরে ওদের ডিভোর্স। সেপারেশন লেটার আসার পরে একদিন ও অপেক্ষা করেনি কথা। সন্ধ্যেতেই সে চলে যায় আহেরীর ফ্ল্যাটে। আজ অনেক দিন পরে কথার মন ভালো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওদের সম্পর্কটা আবার নতুন করে শুরু হবে। কিন্তু কপালে একটা চিন্তার ভাঁজ থেকেই গেছে কথার, আহেরীর ফোন ছ- দিন ধরে সুইচ অফ।)
ঘড়ির কাটায় তখন সন্ধ্যে আট টা। ঘরের সব আলো নিভিয়ে পড়ার টেবিলে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে , নিকোটিনে আর পুরোনো ডায়েরির ভাঁজে ওদের ফোটো আকড়ে বসে আহেরী। কথার চলে যাওয়াটা সে মেনে নিতে পারেনি। কথা বলেছিলো আহেরী যেন লেখা লেখি টা না ছাড়ে । কিন্তু কিছু শব্দ তার মনেই আসছে না। এলো মেলো কিসব লিখছে আর পাতা ছিড়ে জায়গা হচ্ছে ডাস্টবিন এ। হটাৎই দরজার বাইরে কলিং বেলের আওয়াজে অপ্রস্তুত হয়ে পরে আহেরী। সিগারেটটা নিভিয়ে। ঘরের আলো জ্বালিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায় আহেরী।
দরজা খুলে থমকে যায় সে। চোখ ছল ছল করে ওঠে আহেরীর। দরজার ওপার থেকে খুব চেনা স্বর ভেসে আসে।
– আসবো ?
– হ্যাঁ ! আয়।
– কেমন আছিস আহেরী ?
– জানি না।
– বুঝেছি।
– তুই এখন ?
– কেনো ? আসতে পারি না তোর কাছে ?
– হ্যাঁ! তুই ঠিক আছিস কথা ?
– একদম।
– হুম।
– কি হুম ?
– আমায় মনে পড়েনি বল ?
– ফোন টা দেখ। কতো বার ফোন করেছি।
– আসলে ফোনটা মনে হয় চার্জে দেওয়া হয়নি।
– কেনো দিস নি?
– তোকে আর ফোন করতে পারবো না , মেসেজ করতে পারবো না তাই ভালো লাগছিলো না।
– বুঝেছি।
– তুই ভালো আছিস বল আমাকে ছেড়ে ?
– হ্যাঁ ! আজকের পর আরো ভালো থাকবো।
– দীপ তোকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে না রে?
– হুম ! জানিস ও আমার খুব ভালো বন্ধু ও হয়ে গেছে।
– তাহলে আজ এসেছিস কেনো ? ভালো আছিস যখন আমার কাছে কেনো?
– কেনো আমি ভালো থাকি তুই চাস না ?
– না , sorry আমি ওই ভাবে বলিনি। তুই ভালো থাক সেটা না চাইলে তোকে তোর মোতো থাকতে দিতাম না।
– হুম। শোন।
– বল?
– আমি আজ ও তোরই আছি আহেরী। তোরই থাকবো।
– খুব মনে পরে তোকে কথা।
– জানি তো। তাই তো এলাম।
– আবার চলে যাবি তো।
– না।
– মানে ?
( আহেরীর প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই , আহেরীর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে কথা। আহেরী ও কথাকে জড়িয়ে ধরে আরো শক্ত করে। আহেরীর কোমল আলিঙ্গনে জড়িয়ে নেয় নিজেকে । নিস্তব্ধতার মাঝে কেবল আহেরী আর কথার নিশ্বাস-প্রশ্বাস।দক্ষিণা জানলায় শীতল বাতাসের আনাগোণায় পরিবেশ আরো রোমাঞ্চিত। বকুলের ডালের এলোমেলো দোলায় ফুলের গন্ধে ঘর সুরভিত। আহেরীর আঙ্গুলের খাঁজে কথার সারির আচলের কোণ আর আঙ্গুলের খাঁজে কথার কানের কাছের চুলেরা খেলায় ব্যস্ত।দুজনেরই অপলক চোখ, কথার কাছে যাওয়ার গোপন ইচ্ছে কথাকে ইশারায় জানান দিচ্ছে।অপেক্ষায় রয়েছে কথার অনুমতির। ছল ছলে চোখে এক দৃষ্টে আহেরী।
হাত বাড়িয়ে দেয় কথা, কথার কোলে মাথা রেখে কেঁদে ফেলে আহেরী। আহেরিকে জড়িয়ে ফেলেছে বুকের মাঝে কথা শক্ত আলিঙ্গনে। কথার হৃদস্পন্দনে হারানোর ভয় আহেরীর। )
– কি রে ! কাঁদিস না প্লিজ।
– আমি তোকে ছেড়ে থাকতে পড়ছি না রে কথা।
– আর কখনো যাব না তোকে ছেড়ে আহেরী।
– মানে ?
– আমাদের সেপারেশন হয়েছে। ডিভোর্স পাচ মাস পরে।
– আর যাবি না তো কোনো দিন?
– না রে।
(আহেরী নিজেকে সামলে আবার জড়িয়ে ধরে কথা কে। কথা আগলে রাখে বুকে আহেরী কে। পূর্বাভাস ছাড়াই হটাত ই শুরু হলো বৃষ্টি,জলের ছাট ভিজিয়ে দিচ্ছে ওদের শরীর। আহেরী জানলা বন্ধ করতে চাইলে কথা বাঁধা দিয়ে বলে
– ” থাক না আহেরী। আজ আমরা আবার ভিজি একসাথে।”
এমন সময় প্রবল মেঘের গর্জন আর আলোর ছটায় কথার অপূর্ব সুন্দর মুখ স্পষ্ট হয়ে উঠতেই কথা, আহেরী কে বুকে জড়িয়ে নেয়।)
– love you আহেরী।
– love you কথা।
– এবার আবার আমাকে সহ্য করতে হবে।
– হ্যাঁ! তোকেও তো। কোনো কথা শুনব না তোর।
– জানি তো।
( হাল্কা হেসে কথার ঠোঁটের অনুমতি নিয়ে আহেরীরর ঠোঁট কপাল ছুঁলো কথার ,অবশেষে বৃষ্টির ধারা প্রবল হলো, ঘাসেরা বৃষ্টি তে স্নাত আর আমি তোর প্রেমে তোর ঠোঁটের মাঝে আদর খুঁজতে ব্যস্ত।)