বাসস্টপে অপূর্বকে দেখে বেশ অবাক হয় বৃষ্টি। সম্ভবতঃ প্রত্যাশা করেনি ও। বাসস্টপে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সে ঘটাতে চায় না। আজ থেকে দশবছর আগের ঘটনা মনে পড়লে শিউরে ওঠে ও। এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখে বাস হাজির। নতুন চাকরীতে আজ জয়েনিং।
সল্টলেকের একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী পেয়েছে বৃষ্টি।বাসে উঠে অপূর্ব পুরুষদের সিটে আর বৃষ্টি মহিলাদের সিটে বসলো। বাসে অফিস টাইম বলে প্রচণ্ড ভিড়। কোনোরকমে কন্ডাক্টর এসে ভাড়া চাইলো বৃষ্টির কাছ থেকে। অপূর্বও সঙ্গে সঙ্গে বললো-“দাদা আমার ভাড়াটাও কেটে নিন।” কন্ডাক্টার দুজনকেই জিজ্ঞেস করলো আগে বৃষ্টিকে তারপর অপূর্বকে। দুজনেই একসাথে বলে উঠলাম-” সল্টলেক”।
এই পরিস্থিতিতে মাস্ক পড়া অবস্থায় মানুষ চেনা মুশকিল।তাও কন্ঠস্বরে মানুষ চেনা যায়। বৃষ্টি আবারও অবাক হয়ে গেলো এ যে হুবহু এক কন্ঠস্বর। তবে বৃষ্টির সন্দেহটাই ঠিক এ যে অপূর্ব!, আমার প্রাক্তন। সল্টলেক এসে পড়ায় দুজন একসাথে নামলো। অপূর্ব বৃষ্টির অফিসের বিপরীত অফিসটায় চাকরী করে, ওকে ফলো করতে গিয়ে বুঝলো বৃষ্টি। কাকতালীয়ভাবে দুজনেরই অফিস ছুটির সময় এক রাত দশটা। একটাই বাস ধর্মতলা যায় অগত্যা উঠতেই হলো কারণ এরপর আর কোনো বাস নেই।
অপূর্ব আর বৃষ্টির বাড়ির গন্তব্যস্থল এক হওয়ায় নামলো দুজনেই ধর্মতলা। বৃষ্টি ভাবলো আর লুকোচুরি নয় মাস্ক খুলতেই অপূর্ব অবাক বলে উঠলো-“আরে তুই! আছিস কেমন? মাস্ক পরা অবস্থায় চিনতেই পারিনি।” বৃষ্টি বললো-“আমি কিন্তু তোকে অফিস যাবার পথেই চিনেছি।” অপূর্ব বললো-“তোর গলার অংশটা পোড়া কেন?” বৃষ্টি বর্ণণা করতে শুরু করলো—
আজ থেকে দশ বছর আগে তার সাথে কি হয়েছিল। বৃষ্টি বলে-“সেদিন তোকে বারবার থেকে যাবার বায়না করার পরও যখন তুই মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলি তখন কিছু নররূপী জানোয়ার আমায় একা পেয়ে ঘিরে ধরে। সম্ভবতঃ ওদের পরিকল্পনা ছিল ধর্ষণ করে মেরে ফেলা।আমি ছুটে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করায় ওরা আমায় অ্যাসিড ছোড়ে মুখটা কোনোরকমে রক্ষা পায় কিন্তু আমার গলা কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ঝলসে যায় আমি চিৎকার করে যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করি।
আমি “অপূর্ব! অপূর্ব!” করে বহুবার চিৎকার করলেও, তুই কিন্তু একবারও ফিরে তাকাসনি। আমি মরিনি অপূর্ব! সেদিন আমার জেদ বলতে ছিল বাঁচার লড়াই। আমি কিন্তু ঘরে লুকিয়ে বসে থাকি নি। যারা আমার ওপর অত্যাচার করলো তাদের ফাঁসি হয়েছে। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ আছি। আসছে বছরে আমার বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে; শুধু সামাজিক বিয়ে বাকি। চলি রে ভালো থাকিস। এই বলে অপূর্ব আর বৃষ্টি দুজন দুদিকে মুখ ফিরিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।।