আজ আমাদের ৩৫ তম বিবাহবার্ষিকী। বিবাহের পর ৩৫ টা আগস্ট পার হয়েও মনে হচ্ছে আজ থেকে ৩৫ দিন আগে এই ভালোবাসার মানুষটা আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়েছিল। মাঝে মাঝে ভাবি এই দীর্ঘ সময় কেবল একটা চাঁদের ব্যবধান। যে সব নারীদের মুখ তিল কিম্বা ঠোঁটের ওপারে গজদাঁত থাকে তাদেরকে হিসাবের থেকে তিনগুণ বেশি সুন্দরী লাগে। আর আমার উনি উপরিউক্ত দুই বৈশিষ্ট্যের অধিকারিণী। বুঝতেই পারছেন উনি তাহলে কতটা সুন্দরী। তবে হুম, বিয়ের প্রথম দিকের কয়েকটা বর্ষপূর্তির মতো এখন আর বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠান উৎযাপন হয় না।
গত কয়েকটা বছর আমার ওই সুন্দরীর জন্য এখন আর সারপ্রাইজ গিফট এনে দিতে পারিনা। সোহাগে জড়িয়ে ধরে লালাটে স্নেহ চুম্বন দিয়ে কিম্বা দুই ওষ্ঠ এক করে এখন আর ‘শুভ বিবাহবার্ষিকী প্রিয়’ বলা হয় না। আগের মতো বিবাহবার্ষিকীতে বাইরে ঘুরতে যাওয়া হয় না। তবে আন্তরিক ভাবে এই ১১ আগস্ট দিনটার গুরুত্ব বরাবরই একই থেকে গেছে। সময় মানেই পরিবর্তন, আর পরিবর্তন যে কতটা বিষ্ময়কর তা এই ‘বিবাহবার্ষিকী’ আর ওকে দেখিই বারংবার বেশি করে বুঝেছি। সেই সময়ের প্রবল জেদি, বিরাট অভিমানী, ছন্নছাড়া, এক সিদ্ধান্তে অনড় থাকা মেয়েটা সময়ের ব্যবধানে আজ প্রচন্ড ধৈয্যের অধিকারিণী। অন্যদিকে শান্ত, ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমি আজ বড্ড খিটখিটে আর বদ মেজাজী। বিয়ের আগে এবং বিয়ের প্রথম কয়েকটা বছর আমরা প্রায়ই বলতাম আমাদের দুজনের একসাথে থাকা অসম্ভব, আমরা আমাদের চিন্তাভাবনায় দুই মেরুতে অবস্থান করি, যে যার সিদ্ধান্তে চলি, একে-অপরকে ভুলবুঝি।
কিন্তু জানেন শত ভুল বোঝাবুঝি, সমস্যার পরেও আমরা একে অপরকে ছেড়ে যেতে চেয়েও কখনো ছেড়ে যাওয়া হয়নি। ওর মায়াবরণ মুখ, দুজনের অসামান্য বিশ্বাস, অনেকটা আস্থা আর পাহাড় প্রমান ভালোবাসা সাথে আকাশপ্রমাণ কর্তব্য আর সন্তানদের মুখ গুলো আমাদের কখনো আলাদা হতে দেয়নি। এখন আমরা ‘বিচ্ছেদ হওয়া’ স্বপ্নেও কল্পনা করিনা। আসলে সময় আর পরিস্থিতি মানুষকে সব থেকে বেশি করে শিক্ষিত করে তোলে। অতীতের আমরা আর বর্তমানের আমরা এই দুইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। তখন প্রায়ই মনোমালিন্য হতো আর এখন বয়সের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে দুই মনের টান। একটা উপলব্ধি আজ খুব করে হয় – সম্পর্কে রাগ, জেদ, অভিমান, অভিযোগ, ভুল ত্রুটি এগুলো থাকবে কিন্তু এগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে হয়, সম্পর্কে টিকে থাকতে হয়, তবেই হয়তো শত সমস্যার মধ্যে প্রিয় মানুষটার মুখ আমাদের অন্তরে ভালো লাগা, ভালো থাকার অনুভূতি জাগায়। ছেড়ে যাওয়া, ছেড়ে আসা এগুলো জাস্ট একটা সিদ্ধান্ত আর নিজে ভালো থাকার তাগিদ কিম্বা নিজের পছন্দ মতো চলা কিন্তু ভুল-ত্রুটি মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিয়ে পরস্পরের পাশে থাকার নাম-ই তো ভালোবাসা।।
‘শুভ বিবাহবার্ষিকী’ প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী, তোমার জন্য ভাগ্যবান স্বামীর এ উড়োচিঠি।
~ সোহান